বঙ্গভবনে পারসোনাল-প্রাইভেট লাইফ নেই রাষ্ট্রপতির!
 
                                                                                                রাষ্ট্রপতি হিসেবে এক বছর পূর্তিতে সাংবাদিকদের কাছে পেয়ে না-বলা কথা খুলে বললেন আবদুল হামিদ। বললেন, তৃণমূল থেকে উঠে আসা রাজনীতিকদের জন্য বঙ্গভবনের নিয়ন্ত্রিত জীবন সব সময় ‘আরামদায়ক’ নয়। সংসদে মনের খোরাক মিটত, কিন্তু বঙ্গভবনে সেটা নেই।
বঙ্গভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে ওই আলাপচারিতায় উঠে আসে সেখানে রাষ্ট্রপতির নানা অভিজ্ঞতার কথা। বার্তা সংস্থা বাসস আজ শনিবার সেই আলাপচারিতা প্রকাশ করেছে।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, ‘আমি একটা দায়িত্ব নিয়ে এখানে এসেছি। সংসদে মনের খোরাক পেতাম, বঙ্গভবনে পাই না। আসলে তৃণমূলে রাজনীতি করা মানুষের জন্য এ জায়গাটা সব সময় আরামদায়ক হওয়ার কথা নয়। খাঁচার পাখিরে যতই ভালো খাবার দেওয়া হোক, সে তো আর বনের পরিবেশ পায় না।’
আবদুল হামিদ বলেন, ‘ইচ্ছা করলেই অনেক কিছু করতে পারি না। আর ইচ্ছা করলেও তো সমস্যা। ধরেন, মনে হলো কারও বাসায় যাব। আধা ঘণ্টার মধ্যে গাড়ি রেডি। কিন্তু রাস্তা বন্ধ হবে। যে বাসায় যাব, সেখানকার রান্নাঘর থেকে শুরু করে সবকিছু চেক হবে। এটা আমার জন্য বিব্রতকর। তাই ইচ্ছা হলেও চেপে রাখতে হয়। নিতান্তই বিশেষ প্রয়োজন বা সরকারি কোনো অনুষ্ঠান ছাড়া বের হই না। বাইরে যদিও যাই, দশটা মানুষের সঙ্গে কথা বলতে পারি না। ওখানেও নিরাপত্তাকর্মীরা থাকেন।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আসলে এখানে পারসোনাল, প্রাইভেট লাইফ নেই। বিদেশে গেলেও একই অবস্থা। রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর প্রথম যেবার বিদেশ গেলাম, ভাবলাম কিছুটা হলেও ফ্রি। কিন্তু সেখানেও একা থাকতে দেবে না। নিরাপত্তাকর্মীরা সঙ্গে থাকেন। আই এম নট অ্যাট অল এ ফ্রি ম্যান।’
আবদুল হামিদ বঙ্গভবনে তাঁর জীবন সম্পর্কে বলেন, ‘যখন কোর্টে প্র্যাকটিস করতাম, চেম্বারে মানুষ আসত, কথা বলতাম। যদি কখনো না আসত, তবে যেখানে আড্ডা হতো, সেখানে চলে যেতাম। সংসদেও আড্ডা দিতাম। এমপিরা আসতেন, সাংবাদিকেরা আসতেন। বঙ্গভবনে সে সুযোগ নেই।’ এর সঙ্গে তিনি যোগ করলেন, ‘যারা ফ্রিলি মানুষের সঙ্গে মেশে না, তাদের কথা আলাদা। এর আগে বঙ্গভবনে বেশির ভাগই ছিলেন বিচারপতি-শিক্ষক। স্বভাবত তাঁরা বেশি মানুষের সঙ্গে মেশেন না।’
আবদুল হামিদ জানালেন, ‘স্পিকার থাকার সময় মাঝেমধ্যে পাঁচ-সাত দিন এলাকায় গিয়ে থাকতাম। এখন সে অবস্থা নেই।
বললে হয়তো থাকতে পারব। কিন্তু আমি গেলে আশপাশের এলাকা থেকে পুলিশ ফোর্স নিয়ে আসে। ৫০০-৬০০ মানুষ। ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রামে এত লোক রাখার উপায় নেই। আমিতো আরামে থাকব। কিন্তু পুলিশের কনস্টেবল, যারা আসে তারা হয়তো ভালো করে খেতে-ঘুমাতে পারবে না।’
কোন দায়িত্বটি সবচেয়ে বেশি উপভোগ করেছেন—প্রশ্ন করা হলে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘যখন ডেপুটি স্পিকার ছিলাম। দায়-দায়িত্ব বেশি ছিল না। স্পিকার হাউসে (সংসদ) না গেলে হাউস পরিচালনা করতে হতো। আর কোনো কাজ নেই। তেমন কোনো প্রশাসনিক দায়িত্বও নেই। স্পিকারকে অনেক কিছু খেয়াল রাখতে হয়। অনেক সজাগ থাকতে হয়।’
রাষ্ট্রপতি হিসেবে বঙ্গভবনে এক বছরের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে আবদুল হামিদ বলেন, ‘আসলে রাষ্ট্রপতি হিসেবে তেমন কোনো কাজ নেই। যেটা করি রুটিন কাজ। নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সবাইকে বিবেক-বুদ্ধি দিয়ে পরামর্শ দিয়েছি।’
২৪ এপ্রিল বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে এক বছর পূর্ণ করেন আবদুল হামিদ। দেশের ১৯তম রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান অসুস্থ হওয়ার পর গত বছরের ১১ মার্চ অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন তিনি। জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর ২৪ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন কিশোরগঞ্জ থেকে সাতবার সাংসদ নির্বাচিত হওয়া আবদুল হামিদ।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার আগে দুই দফা জাতীয় সংসদের স্পিকারের দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় তাঁর স্বভাবজাত হাস্যরস দিয়ে সংসদ মাতিয়ে রাখতেন। আর এ কারণে সাধারণ মানুষের মাঝেও জনপ্রিয়তা পান তিনি।
                                
 
                    
                   
                    
                   
                    
                   
                    
                   
                    
                   
                    
                   
                    
                   
                    
                   
                    
                   
                    
                   
                                                             
                                                             
                                                             
                                                            