সরকার ঘোষিত প্রণোদনার অর্থ এসএমই খাতে যাচ্ছে না: পরিকল্পনামন্ত্রী
 
                                                                                                করোনা মহামারিতে সরকার ঘোষিত প্রণোদনার অর্থ অনানুষ্ঠানিক বা এসএমই খাতে যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
তিনি বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করে অর্থনীতির গতি ঠিক রাখতে সম্প্রতি বিভিন্ন খাতে প্রণোদনার টাকা দিচ্ছিল সরকার। তখন দেখা যায়, বড় বড় শিল্পখাত সংশ্লিষ্টরা তা দ্রুত লুফে নিয়েছে। কিন্তু অনানুষ্ঠানিক খাতে এ টাকা যাচ্ছে না। ওই অনানুষ্ঠানিক খাতের সঙ্গে সরকারের সংযোগ নেই বা চ্যানেলগুলো শুকিয়ে গেছে বা অস্তিত্বই নেই খাতা-কলমে। এগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করা, অনুদান বা সহায়তার ব্যবস্থা করা সরকারের বিশাল কাজ।’
রোববার (২৩ মে) বিকেলে ‘অ্যাড্রেসিং দ্য চ্যালেঞ্জ অব সিএমএসএমইএস ইন দ্য ইনফরমাল সেক্টর– ক্রিয়েটিং অপরচুনিটিস থ্রো ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন’ শীর্ষক এক প্রাক-বাজেট আলোচনায় এসব কথা বলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
তিনি বলেন, ‘এই যে টাকা যাচ্ছে না, এ ক্ষেত্রে অর্থপ্রবাহে এসএমই ফাউন্ডেশন ও পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানাই।’
অনানুষ্ঠানিক খাতকে অর্থসহায়তা দেয়ার মনোভাব সরকারের আছে বলেও এ সময় উল্লেখ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী।
এম এ মান্নান বলেন, ‘ইনফরমাল সেক্টররা আমাদের এখানে একধরনের আড়ালে পড়েছিল। যেহেতু আমরা অনুন্নত দেশ ছিলাম, শিল্পকে একধরনের উচ্চমার্গে স্থান দেয়া হয়। শিল্প বলতে মনে করা হয়, এখানে বিশাল বিশাল কাজ হবে, লাখ লাখ লোক কাজ করবে- কাপড়, টেক্সটাইলস, পাট ইত্যাদি। মাথার মধ্যে ঘুরছিল একধরনের। আমরা শিল্পায়িত হবো। আমরা জাহাজ বানানো, বিমান বানাবো, গাড়ি বানানো ইত্যাদি। এ ধরনের একটা ধারণা আমাদের ছিল। আসলে ওটা আমাদের ক্ষেত্র নয়। কারণ এখানে বহু আগে থেকেই ঔপনিবেশিক শক্তিরা জায়গা দখল করে বসে আছে। ওখানে মাথা ঢুকানো আমাদের জন্য সমস্যাই।’
তিনি বলেন, ‘বাজার এমন এক জিনিস, যেখানে সবারই স্থান আছে। বিশ্ববাজারে একটা কোনা আছে, যেখানে আমাদের একান্ত নিজস্ব। কিছু কিছু ব্যাপার আছে আমাদের নিজস্ব অর্থনীতির একদম গভীরে। যেখানে অন্য কেউ আসতে পারবে না। সেটা এক্সপান্ড করা, তুলে ধরা, সেটাকে কাজে লাগানোই বোধহয় হওয়ার কথা ছিল আমাদের কৌশল। আমি উপরের শিল্পকে অবহেলা করতে বলছি না। সেটা হয়তো হবে সময়ের তালে। কিন্তু এখানে আমাদের ক্ষেত্র আছে, সম্ভাবনা আছে। আর সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থান এসব খাতেই।’
এই অনানুষ্ঠানিক খাতকে সরকারের সামনে না পড়াই ভালো উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘সরকারের দায়িত্ব হবে। আমাদের মন্ত্রী মহোদয় (শিল্প প্রতিমন্ত্রী) আছেন এখানে। তাদেরকে (অনানুষ্ঠানিককে) আড়াল থেকে। সামনে গেলেও বিপদ। সরকারের সামনে না পড়াই ভালো। সরকারের কাছ থেকে যতই দূরে থাকবেন ততই মঙ্গলে থাকবেন। তবে সরকারও যেন একটু দূর থেকে দেখে। মা যেমন শিশুকে দূর থেকে দেখে খেলছে, পড়ে গেলে দৌঁড় দিয়ে যায় না কারণ জানে বাচ্চা ঠিক উঠে দাঁড়াবে। সরকারও একদম মায়ের ভূমিকায় থাকবে যে, দূর থেকে দেখবে, পরিবেশ সৃষ্টি করবে, চোখ-কান খাড়া রাখবে কিন্তু সংস্থাগুলোকে নিজস্ব গতিতে চলার সুযোগ ও স্বাধীনতা দেবে।’
ভার্চুয়ালি এ আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। তিনি বলেন, ‘ইনফরমাল সেক্টরকে সহায়তা করা, এ বিষয়ে আমরা সবসময়ই বলে থাকি চেষ্টা করছি। কারণ ইনফরমাল সেক্টরটি এত বিস্তৃত এবং এই খাত থেকে দেশের যে গ্রোথ, সে গ্রোথটা ব্যাপকভাবে সহায়তা পায়নি। কিন্তু এত বছর ধরে নানারকম চেষ্টা করেও আমরা এমন কোনো পদ্ধতি আবিষ্কার করতে পারিনি, যেটাকে বলতি পারি এটি অবলম্বন করলে যথাযথ ফলাফল পাওয়া যাবে।’ তবে এ ক্ষেত্রে তিন ধরনের এক্সপেরিমেন্ট চালানো হয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পসহ অনানুষ্ঠানিক খাতের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকারের সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। জামানতের অভাবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারদের যেন ঋণ পেতে সমস্যা না হয়, এজন্য ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম চালু করেছে সরকার। অনানুষ্ঠানিক খাতের দক্ষতা বাড়াতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে কাজ করছে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। ট্রেড লাইসেন্স না থাকায় ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ পেতে নানা ভোগান্তির শিকার হতে হয় ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের। এজন্য আসছে বাজেটে তাদের জন্য বিশেষ বরাদ্দ রাখার অনুরোধ জানাই।’
এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য জেলায় জেলায় এসএমই পল্লী স্থাপনের ব্যাপারেও মত দেন শিল্প প্রতিমন্ত্রী।

 
                    
                   
                    
                   
                    
                   
                    
                   
                    
                   
                    
                   
                    
                   
                    
                   
                    
                   
                    
                   
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                            