বাংলাদেশের ডাকটিকেট প্রকাশের সুবর্ণজয়ন্তীর স্মারক ডাকটিকেট অবমুক্ত অনুষ্ঠানে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী
 
                                                                                                বাংলাদেশের ডাকটিকেট প্রকাশের সুবর্ণজয়ন্তী ২০২১ সালের ২৯ জুলাই।মুক্তিযুদ্ধকালীন ১৯৭১ সালের এই দিনে প্রথম ৮টি ডাকটিকেট  মুজিবনগর সরকার প্রকাশ করে।মুজিব নগর সরকার প্রকাশিত এই ডাকটিকেট মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের গৌরবোজ্জ্বল অংশ। এই উপলক্ষ্যে ডাক অধিদপ্তর স্মারক ডাকটিকেট প্রকাশ করেছে এবং  ও ভার্চুয়াল আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী জনাব মোস্তাফা জব্বার বাংলাদেশের প্রথম ডাক টিকেট প্রকাশের ঐতিহাসিক গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং মুক্তিযুদ্ধে বাঙালীদের বিজয়ের একটি হাতিয়ার হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিবাহিনী ও দেশের জনগণের কাধে কাধ মিলিয়ে ডাকবিভাগের কর্মীদের লড়াই এর কথা স্মরণ করেন ও দেশের সকল শহীদদের পাশাপাশি ডাক বিভাগের শহীদ কর্মকর্তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। মন্ত্রী বলেন, ডাকটিকিট একটি জাতির ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং বিশিষ্ট ব্যক্তি সম্পর্কে কথা বলে। যাদের নিয়ে ডাকটিকেট প্রকাশ করা হয় তারা ইতিহাসের খ্যাতনামা মানুষ। মুক্তিযুদ্ধসহ শিল্প-সাহিত্য, সংস্কৃতি এবং রাজনৈতিক পরিমন্ডলে অবদান রাখা মানুষগুলোকে নিয়ে স্মারক ডাক টিকিট প্রকাশের উদ্যোগ একটি বড় মহৎ কাজ বলে তিনি উল্লেখ করেন।তিনি বলেন একটি ডাকটিকেট শতাব্দির পর শতাব্দির ইতিহাসকে প্রতিনিধিত্ব করে।আমাদের মুক্তিযু্দ্ধের ৯মাসের  প্রতিটি দিনই জাতির ত্যাগের ইতিহাসের অংশ উল্লেখ করে তিনি বলেন, সবগুলো ঘটনা নিয়ে হয়তো ডাকটিকেট প্রকাশ করতে না পারলেও প্রতিটি ঘটনার প্রতিনিধিত্বমূলক একেকটি বিষয় নিয়ে আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ডাক টিকেট প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করছি। একই প্রয়াস আমরা মুবিজবর্ষেও নিয়েছি। তিনি বলেন,  নতুন প্রজন্মের কাছে এক একটি ডাকটিকেট একেকটি মহাকাব্য হতে পারে।মন্ত্রী নতুন প্রজন্মকে  স্মারক ডাক সংগ্রাহক হিসেবে উদ্বুদ্ধ করতে ফিলাটেলিক সংগঠনসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান। দেশের সকল পোস্ট অফিসে যাতে স্মারক ডাকটিকেট সংগ্রহ করা যায় এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মন্ত্রী ডাক অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেন।
ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো: সিরাজ উদ্দিন- এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো: আফজাল হোসেন এবং বিটিআরসি‘র চেয়ারম্যান শ্যামসুন্দর সিকদার বক্তৃতা করেন। বিটিআরসির চেয়ারম্যান জনাব শ্যামসুন্দর সিকদার অত্যন্ত চমৎকারভাবে বাংলাদেশের প্রথম ডাক টিকেট প্রকাশের ইতিহাসসহ উপ মহাদেশে ডাক টিকেট প্রকাশের ইতিহাস তুলে ধরেন।
বাংলাদেশের ডাকটিকেট প্রকাশের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে দশ টাকা মূল্যমানের একটি স্মারক ডাকটিকেট, দশ টাকা মূল্যমানের একটি উদ্বোধনী খাম  এবং পাঁচ টাকা মূল্যমানের একটি ডাটা কার্ড ও একটি বিশেষ সীলমোহর প্রকাশ করেছে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী জনাব মোস্তাফা জব্বার অনুষ্ঠানে ডাকটিকেট ও উদ্বোধনী খাম অবমুক্ত করেন এবং ডাটাকার্ড প্রকাশ করেন। এই সময় বিশেষ সীলমোহর ব্যবহার করা হয়।বাংলাদেশের প্রথম ডাকটিকেট প্রকাশের সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে মন্ত্রী বিবৃতি দিয়েছেন।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বিবৃতিতে ১৯৭১ সালের ২৯ জুলাই ভারতীয় নাগরিক বিমান মল্লিক (বিমান চাঁদ মল্লিক)- এর ডিজাইন করা আটটি ডাকটিকিট মুজিব নগর সরকার, কলকাতায় বাংলাদেশ মিশন ও লন্ডন থেকে প্রকাশিত হয় উল্লেখ করেন।তিনি বলেন, মুজিব নগর সরকার কুটনৈতিক প্রক্রিয়া হিসেবে স্বাধীনতার স্বপক্ষে বিশ্ব জনমত গড়ে তোলার জন্য এ উদ্যোগ গ্রহণ করে।বাংলাদেশ সরকার ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য ও ডাক বিভাগের পোস্টমাস্টার জেনারেল জন স্টোনহাউসকে এ ডাকটিকিট প্রকাশের দায়িত্ব প্রদান করে উল্লেখ করেন একাত্তরের রণাঙ্গণের বীর যোদ্ধা জনাব মোস্তাফা জব্বার।তিনি বলেন,জন স্টোনহাউস লন্ডনপ্রবাসী বাঙালি নকশা প্রণয়নকারী বিমান মল্লিককে বাংলাদেশের ডাকটিকিটের নকশা করার দায়িত্ব দেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের ২৬ জুলাই লন্ডনের হাউস অব কমনসে বিমান মল্লিকের নকশা করা আটটি ডাকটিকিট ও একটি উদ্বোধনী খাম প্রদর্শন করা হয়।  ১৯৭১ সালের ২৯ জুলাই বাংলাদেশের প্রথম আটটি ডাকটিকিট প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে একযোগে মুজিবনগর, কলকাতার বাংলাদেশ মিশন ও লন্ডন থেকে প্রকাশিত হয়। 
১৯৭১ সালের ১ আগস্ট ব্রিটেনের ট্রাফালগার স্কয়ারে বিমান মল্লিক বাংলাদেশের আটটি ডাকটিকিট জনসমক্ষে হাত উঁচিয়ে তুলে ধরেন। এ অনুষ্ঠানে জন স্টোনহাউসসহ অনেক গণ্যমান্য অতিথি, প্রবাসী বাঙালি ও ব্রিটিশ নাগরিকেরা উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশের অস্তিত্ব জানান দেওয়ার জন্য এই আটটি ডাকটিকিট বড় ভূমিকা পালন করে বলে মন্ত্রী বিবৃতিতে উল্লেখ করেন।
বক্তারা বাংলাদেশের প্রবাসি সরকার প্রকাশিত প্রথম ডাকটিকেটকে বিশ্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে জনমত সৃষ্টিতে ঐতিহাসিক মাইলফলক হিসেবে উল্লেখ করেন। 
স্মারক ডাকটিকেট, উদ্বোধনী খাম ও ডাটাকার্ড আজ বৃহস্পতিবার থেকে ঢাকা জিপিও’র ফিলাটেলিক ব্যুরো এবং পরে দেশের অন্যান্য জিপিও এবং প্রধান ডাকঘর থেকে সংগ্রহ করা যাবে।#
পরে মন্ত্রী বাংলাদেশের ডাকটিকেট প্রকাশের সুবর্ণজয়ন্তী ২০২১  উপলক্ষে বাংলাদেশ ফিলাটেলিক এসোসিয়েন আয়োজিত ডাকটিকেট প্রদর্শনী ২০২১ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তিনি এই উপলক্ষে একটি স্মারক উদ্বোধনী খাম অবমুক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ফিলাটেলিক এসোসিয়েশনের সভাপতি কাজী শরিফুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিটিআরসি চেয়ারম্যান শ্যামসুন্দর সিকদার, ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো: সিরাজ উদ্দিন এবং ফিলাটেলিক এসোসিয়েশন কর্মকর্তা মো: মুনিরুল ইসলাম বক্তৃতা করেন।
                                
 
                    
                   
                    
                   
                    
                   
                    
                   
                    
                   
                    
                   
                    
                   
                    
                   
                    
                   
                    
                   
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                            