শিরোনাম

আমার একটি গোপন ইচ্ছে আছে: ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী

 প্রকাশ: ৩১ মে ২০২১, ০৫:৪০ অপরাহ্ন   |   স্পিকার




সাধারণ চোখে স্পীকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরীকে দেখলে খুবই চুপচাপ স্বভাবের মনে হয়। কিন্তু অনেকেই হয়তো জানেন না ব্যক্তিগত জীবনে বেশ আড্ডাবাজ, হাসিখুশি একজন মানুষ তিনি। তাঁর আছে বিশাল এক বন্ধুর তালিকা। এর মধ্যে ১০ থেকে ১২ জন বন্ধু শুধু স্কুল জীবনের। তাঁর মতে, ছোটবেলার বন্ধুরাই আসল বন্ধু। এই সম্পর্ক কখনোই নষ্ট হবার নয়। কেননা ছোটবেলার বন্ধুদের সঙ্গে কোনো স্বার্থের সম্পর্ক থাকে না। এছাড়াও জীবনচলার পথে নানা সময়ে আরো কিছু মানুষের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব হয়েছে। প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, আমি মূলত একা থাকতে পছন্দ করি না। তবে অবসরে বন্ধু-বান্ধবের সাথে সময় কাটাতে ভালো লাগে। তাই নানা কাজের ব্যসত্মতার ফাঁকে সময় পেলে এখনো হঠাৎ করেই কোনো না কোনো বন্ধুর বাসায় আড্ডা দেই। গল্প করি। কয়েকজন মিলে কোথাও কেনাকাটা করতে যাই। বিশেষ করে শাড়ি…।

তাঁর প্রিয় পোশাক টাঙ্গাইলের সুতি শাড়ি। শাড়ি পরতেই তিনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। এটাই তার নিজস্ব স্টাইল। শিরিন শারমিনের মতে, ফ্যাশন কিংবা স্টাইলটা যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমি আমার মতোই স্টাইলিশ। তবে হ্যাঁ, এমন কোনো স্টাইল করি না যা দৃষ্টিকটু মনে হয়। মানুষ যার যার অবস্থান থেকে ফ্যাশন করবে। এটাই হওয়া উচিত।

বরাবরই মার্জিত ফ্যাশন কিংবা স্টাইলের মাধ্যমে বেড়ে উঠেছেন তিনি। আর বর্তমানে সরকারের যে গুরুদায়িত্ব তার কাঁধে সেই বিবেচনায় ফ্যাশনের ব্যাপারে অত্যনত্ম সচেতন থাকেন তিনি। অবশ্য ছোটবেলা থেকেই পরিবারের মাধ্যমে এই শিক্ষা নিয়েছেন শিরিন শারমিন। তাঁরা দুই বোন। তিনিই বড়। ছোটবোন তাঁর থেকে সাড়ে ৯ বছরের ছোট। সুতরাং বাবা-মার পরিবারে দীর্ঘদিন অনেক আদর-স্নেহ আর ভালোবাসা তিনি একাই ভোগ করেছেন। তবে হ্যাঁ, অনেক আদর-যত্ন থাকলেও পড়ালেখার ব্যাপারে পরিবার থেকে কোনো ছাড় দেয়া হয়নি তাঁকে।

তিনি খুবই মেধাবী ছাত্রী ছিলেন। নোয়াখালীর চাটখিলে দাদা বাড়ি আর সিলেটের বড়লেখায় নানা বাড়ি হলেও ঢাকাতেই বড় হয়েছেন। ১৯৬৬ সালের ৬ অক্টোবর তিনি ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। ধানমন্ডিতে তিনি বেড়ে উঠেছেন। বাবা-মা দুজনেই সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার মাধ্যমে তৎকালীন সিএসপি অফিসার ছিলেন তার বাবা রফিকুল্লাহ চৌধুরী। আর মা অধ্যাপক নাইয়ার সুলতানা শিক্ষকতা পেশায় থেকে নানা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। ইডেন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের প্রধান, ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ, শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং সর্বশেষ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মেম্বার ছিলেন। শিরিন শারমিনের মতে, তার মা অধ্যাপক নাইয়ার সুলতানা সম্ভবত ঢাকা কলেজের প্রথম মহিলা অধ্যক্ষ।

একটা গুণী পরিবারে বেড়ে ওঠা শিরিন শারমিন ঐতিহ্যগতভাবেই পড়াশোনায় দেশসেরার স্বীকৃতিও অর্জন করেন। ঢাকার হলিক্রস স্কুল  অ্যান্ড কলেজ থেকে মানবিক শাখায় সম্মিলিত মেধাতালিকায় এসএসসি এবং এইচএসসিতে তিনি যথাক্রমে প্রথম এবং দ্বিতীয় হয়েছিলেন। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদ থেকে এলএলবি (অনার্স) এবং এলএলএম (মাস্টার্স) পরীক্ষায় তিনি প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন। কমনওয়েলথ বৃত্তি নিয়ে ১৯৯৬ সালে যুক্তরাজ্যের এসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনের উপর পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ছোটবেলা থেকে আইন পেশার প্রতি দুর্বলতা ছিল তাঁর। প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, এটা একটা স্বাধীন পেশা। এখান থেকে নিপীড়িত, সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে কথা বলা যায়। তাই ২০০০ সালে পড়াশোনা শেষ করে দেশে ফিরে তিনি আইন পেশার সঙ্গেই যুক্ত হন। বহু রাজনীতিবিদের মামলাও তিনি পরিচালনা করেছেন। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের অনেক সিনিয়র নেতার।

রাজনীতির প্রতি ছোটবেলা থেকেই দুর্বলতা ছিল। তাঁর বাবা রফিকুল্লাহ চৌধুরী ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন তাঁর বাবা। ১৯৫৮ সালে পূর্ব পাকিসত্মান ছাত্রলীগের প্রথম সভাপতি এবং পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ১৯৭২ সালে। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশেই তিনি সিএসপি অফিসার হন। প্রসঙ্গক্রমে শিরিন শারমিন বলেন, বাবাকে উদ্দেশ করে বঙ্গবন্ধু একদিন বলেছিলেন, ‘তোমার মতো মেধাবী মানুষ প্রশাসনে খুব দরকার।’

ছোটবেলা থেকে শিরিন শারমিন রাজনীতিবিদদের খুব কাছে থেকে দেখেছেন। তাঁদের বাসায় ছিল অনেক বিশিষ্ট নেতার অবাধ যাতায়াত। ২০০৯ সালে মহিলা সাংসদ হিসেবে প্রত্যক্ষ রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন তিনি। এরপর সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছেন। সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ পদ জাতীয় সংসদের স্পীকার পদে থেকে বর্তমানে দ্বিতীয়বারের মতো জাতীয় সংসদ পরিচালনা করছেন তিনি। এই প্রসঙ্গে ড. শিরিন শারমিন জানান, এটা তাঁর জন্য বিরল পাওয়া। কখনোই চিনত্মা করেননি দেশের জাতীয় সংসদে স্পীকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।

শিরিন শারমিন বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীর ক্ষমতায়নের ব্যাপারে বরাবরই গুরুত্ব দিয়েছেন। সেনা, নৌ, বিমান বাহিনী, পুলিশ, আপিল বিভাগ, হাইকোর্ট-এ বিচারপতি নিয়োগসহ প্রত্যেক ক্ষেত্রেই মহিলাদের অগ্রাধিকার দিয়েছেন। তেমনই জাতীয় সংসদের ব্যাপারেও তিনি ভেবেছেন। আমাদের পাশের দেশ ভারত কিংবা পাকিসত্মানেও মহিলা স্পীকার ছিল। সুতরাং বাংলাদেশে কেন নয়? শিরিন শারমিনের মতে, দেশের মানুষ সম্ভবত মহিলা স্পীকারকে ভালোভাবেই গ্রহণ করেছে। তিনি যখন বাইরে যান তখন খেয়াল করেন রাসত্মা থেকে রিকশায় কিংবা গাড়িতে বসে তাকে দেখে বিভিন্ন বয়সী মহিলা হাত নাড়েন। সালাম দেন। শুভেচ্ছা জানান। আবার অনেক সময় দেখা যায় কোনো শপিং মলের পাশে জ্যাম-এ আটকে গেছেন তখন আশেপাশের অনেকেই হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান। এই থেকে বোঝা যায় দেশের সকল নারীই আমাকে তাদের প্রতিনিধি হিসেবে মনে করছে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেতা, স্পীকার এবং সংসদ উপনেতা সবাই মহিলা। এই বিষয়টাকেও তিনি ইতিবাচকভাবে দেখেন। তাঁর মতে, এতে নারীদের সম্ভাবনার জায়গাটা তৈরি হয়েছে। ইতিবাচক বার্তাটা হলো, আপনি যদি যোগ্যতম মানুষ হন তাহলে নারী হলেও যোগ্যতম চেয়ারগুলো আপনার জন্য উন্মুক্ত। এটা কিন্তু খুবই শক্তিশালী একটি ম্যাসেজ। বর্তমান সরকারের যোগ্যতম পদগুলোতে নারী নেতৃত্ব থাকায় আনত্মর্জাতিকভাবে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে বলে মনে করেন স্পীকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী।

স্পীকার হওয়া কিংবা প্রথমদিনের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে শিরিন শারমিন চৌধুরী জানান, এই অনুভূতি কিংবা অভিজ্ঞতা দুই ভাগে বলা যায়। তিনি স্পীকার হওয়ার আগে থেকেই মিডিয়ার কল্যাণে তাঁর নাম উঠে এসেছিল। কিন্তু তখনো তিনি দাবি করে বলতে পারেননি। পরে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এককভাবে তাঁর নাম উঠে আসায় ২০১৩ সালের ২৯ এপ্রিল রাতে বিভিন্ন টিভির খবরে, স্ক্রলে তার নাম ঘোষণা করা হয়। তখন তাঁর মনে সত্যিকারের অনুভূতি তৈরি হয়। পরের দিন যখন সাংসদদের ভোটের মাধ্যমে স্পীকার মনোনীত হলেন তখনকার অনুভূতি ছিল অন্যরকম। ২০১৩ সালের ২ জুনের কথা সারাজীবন তাঁর কাছে স্মৃতি হয়ে থাকবে। ঐদিন তিনি প্রথম সংসদ অধিবেশন পরিচালনা করেন। সেই সময় থেকে তাঁর মনে হয়েছে দেশের সাংবিধানিক অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব তাঁর হাতে। সুতরাং এই গুরুদায়িত্ব সফলভাবে পালন করার মধ্যদিয়ে নারীর ক্ষমতায়ন ও সাফল্যের জায়গাগুলো উজ্জ্বল করতে হবে। তাঁর মতে, স্বাধীনতা-পরবর্তী আজকের ১০ম সংসদ অবশ্যই গণতন্ত্রের জন্য মাইলস্টোন। শুধু ১০ম নয়, প্রতিটি সংসদেই গণতন্ত্র সুসংহত ও কার্যকর রাখার জন্য কম-বেশি অবদান রেখেছে। পৃথিবীর অনেক দেশের ইতিহাস দেড়শ-দুইশ বছরের। আমাদের স্বাধীনতার ৪২ বছরে গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতায় মাঝেমধ্যে হোঁচট খেয়েছে। সেই সকল বাজে অভিজ্ঞতা বাদ দিলে বাকি সবটুকুই ইতিবাচক। তবে সরকার আর বিরোধী দলের মধুর সম্পর্ক, দায়িত্বশীল ভূমিকা থাকলে ভালো। কেননা ভালো কাজের চর্চার মাধ্যমে গণতন্ত্র সুদৃঢ় হয়।

বাংলাদেশ সম্পর্কে খুবই পজেটিভ ধারণা পোষণ করেন স্পীকার শিরিন শারমিন চৌধুরী। তাঁর মতে, আমাদের দেশের জনসংখ্যার একটা বড় অংশ তরুণ। তরুণরাই আমাদের বড় শক্তি। ইউরোপের অনেক দেশ তারুণ্যের সংকটে ভুগছে। মানবসম্পদ আমাদের বড় শক্তি। মহিলাদের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে তাদের মধ্যে যে আত্মপ্রত্যয় এবং যেকোনো প্রতিকূলতাকে মোকাবিলা করার সাহস দেখেছেন সেগুলোকেই সম্ভাবনার জায়গা মনে করেন। ১৮ বার নদী ভাঙ্গনের পরও একজন মহিলা আবার তার জীবন সংগ্রাম শুরু করেন। জীবন নিয়ে ঘুরে দাঁড়ান, এইটা শুধু বাংলাদেশেই সম্ভব। আমাদের দেশের মানুষ সহজেই কষ্টকে ভুলতে পারেন। সামান্য পাওয়াতেই আনন্দ আড্ডায় মেতে ওঠেন।

স্পীকার শিরিন শারমিন চৌধুরীর আনন্দও বহুমুখী। জগতের সবকিছুকেই তিনি পজেটিভভাবে দেখতে চান। তাঁর বিনোদনের একটা বড় অংশ জুড়ে আছে বইপড়া আর গান শোনা। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের লেখা প্রায় সব বই-ই তিনি পড়েছেন। কাজের অবসরে সময় পেলে এখনো সঞ্চয়িতা, গীতবিতান পড়েন। এছাড়া পৃথিবীর বিখ্যাত সব লেখকদের বইও তিনি পড়েছেন। গানের মধ্যে রবীন্দ্রসঙ্গীত তাঁর সবচেয়ে পছন্দের। এছাড়াও নজরুলসঙ্গীত, অতুল  প্রসাদসহ পুরনো দিনের সব গানই তার ভালো লাগে। ছাত্রজীবনে ভালো গানও গাইতেন শিরিন শারমিন চৌধুরী। রবীন্দ্রসঙ্গীতের তালিম নিয়েছেন তিনি। স্কুল-কলেজের প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠানে গান গেয়ে অনেক পুরস্কারও পেয়েছেন। শুধু গান নয়, উপস্থিত বক্তৃতা, বিতর্ক, কবিতা আবৃত্তিসহ নানা বিষয়ে তাঁর অনেক শ্রেষ্ঠত্বের পুরস্কার আছে। এখন সেইসব চর্চা না থাকলেও শিল্প-সংস্কৃতির ব্যাপারে তাঁর আগ্রহ বেশ। তাঁর স্বামী সৈয়দ ইশতিয়াক হুসাইন ফার্মাসিস্ট হলেও গ্রুপ থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত। পদাতিক নাট্য সংসদের পরিচালনা পর্ষদেও আছেন। তাই বেইলী রোডের মঞ্চপাড়ায় একসময় শিরিন শারমিনের ছিল অবাধ যাতায়াত। পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়, নূরলদীনের সারাজীবন, সাতঘাটের কানাকড়ি, ধূর্তসহ অনেক নাটক একাধিকবার মঞ্চে দেখেছেন তিনি। টিভি নাটকের মধ্যে এইসব দিনরাত্রি, সকাল সন্ধ্যাসহ অনেক ধারাবাহিক নাটক নিয়মিত দেখতেন। আফজাল-সুবর্ণা জুটির রোমান্টিক নাটক আর আসাদুজ্জামান নূর অভিনীত সকল নাটক দেখতেন শিরিন শারমিন চৌধুরী। কলেজে পড়াকালীন সময়ে বন্ধু এবং পরিবারের অনেকের সঙ্গে হলে গিয়ে সিনেমাও দেখেছেন। সুজন সখী, সারেং বউ, গোলাপী এখন ট্রেনে ছবির কথা এখনো তাঁর মনের আয়নায় ভেসে ওঠে। তবে নানান ব্যসত্মতার কারণে এখন অতটা সময় করে নাটক-সিনেমা দেখতে পারেন না। একটু সময় পেলে স্বামী-সনত্মান আর ঘর সংসারের কাজে ব্যসত্ম হয়ে যান।

শিরিন শারমিন চৌধুরী এলএলবি অনার্স পড়াকালীন সময়ে ১৯৯১ সালের ডিসেম্বর মাসে বিয়ে করেন। তাঁদের ঘর আলো করে আছে দুই সনত্মান। বড় মেয়ে লামিসার বয়স ২০ বছর। তিনি আমেরিকার বোস্টনে বৃত্তি নিয়ে আন্ডার গ্র্যাজুয়েশন করছেন। আর ছোট ছেলে সৈয়দ ইফতেসামের ১১ বছর বয়স। সে সানবিমস স্কুলে স্টান্ডার্ড ফোর-এ পড়ছে। এক সময়ে ওদের নিয়ে বাইরে ঘোরাঘুরি আর রেস্টুরেন্টে খেতে যেতেন। এখন আর সময় হয় না। তবে সময় পেলে বাসায় থেকে নিজ হাতে রান্না করতে পছন্দ তাঁর। প্রসঙ্গক্রমে তিনি জানালেন, খুব ভালো রান্না করতে পারেন তিনি। পরিবারের নানা অনুষ্ঠানে বিশেষ রান্না নিজ হাতেই করেন। সনত্মানদের পছন্দের খাবার খাওয়ান। সনত্মানদের নিয়ে তার ভাবনা হলো বিশ্বায়নের এই যুগে দ্রুতই সবকিছু পরিবর্তন হচ্ছে। আমাদের চিনত্মা আর এই প্রজন্মের চিনত্মার মধ্যে অনেক ভিন্নতা আছে। সুতরাং ওদের চাহিদা, গুরুত্ব, চিনত্মা-চেতনা আলাদা। মা হিসেবে আমি চাই আমাদের সনত্মানদের বেসিক কোর্সটা ঠিকমতো হোক। পরবর্তীতে তারা তাদের সুবিধামতো পেশা বেছে নেবে।

জীবন সম্পর্কে বলতে গিয়ে শিরিন শারমিন জানান, মানুষের জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ই গুরুত্বপূর্ণ। একেকটি অধ্যায় একেক রকম। শৈশব, স্কুল-কলেজ জীবন, বাবা-মা, ভাই-বোনদের সঙ্গে থাকাকালীন সময় একরকম। পরবর্তীতে স্বামী-সনত্মানদের কেন্দ্র করে আবর্তিত হয় আরেক জীবন। তবে প্রতিটি অধ্যায়েরই আলাদা আলাদা স্বাদ আছে। ভালোমন্দ অনুভূতি আছে। ব্যক্তিজীবনে একজন নারী যত বড়ই হোন না কেন সনত্মানদের কাছে তিনি মা। মায়ের মমতা সনত্মানের জন্য আলাদাভাবে প্রকাশিত হয়। শিরিন শারমিন চৌধুরীর জীবনের অনেক বাঁক থাকলেও তাঁর কাছে জীবন অনেক মধুর। তাই জীবনে তাঁর অর্জনের অংশই বেশি। তারপরও একটা অপূর্ণতার কথা খুব গোপনে জানালেন তিনি। জীবনে যদি কখনো সুযোগ আসে তাহলে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করতে চান। যদি সেই সুযোগ না হয় তাহলে অনত্মত কিছুদিনের জন্য হলেও লেখাপড়া করতে চান সেখানে।