ডিপিডিসি ঢাকা মহানগরীর বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিযুক্ত একটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি
 
                                                                                                ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি)  ঢাকা মহানগরীর বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিযুক্ত একটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি। বিদ্যুৎ বিভাগের সংস্কারের অংশ হিসেবে ২০০৫ সালের ২৫ অক্টোবর ডিপিডিসি গঠন করা হয়। ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইন অনুসারে গঠিত এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত এ কোম্পানির শতভাগ শেয়ারের মালিকানা সরকারের। ২০০৮ সালের ১ জুলাই এ সংস্থাটি পূ্র্বতন ঢাকা ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই অথরিটি (ডেসা)-র স্থলাভিষিক্ত হয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করে। ওই বছরেরই সেপ্টেম্বর মাসে একটি চুক্তির মাধ্যমে ডেসার সকল সম্পদ ও দায় ডিপিডিসির কাছে হস্তান্তর করা হয়।
ঢাকা মহানগরীতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণ ব্যবস্থার দায়িত্ব পাওয়া ডিপিডিসির অতীত ইতিহাস ঘটনাবহুল। ১৯০১ সালে ঢাকা নওয়াব পরিবারের উদ্যোগে আহসান মঞ্জিল প্রাসাদের জন্য ছোট একটি জেনারেটরের সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ ব্যবস্থার সঙ্গে পরিচয় হয় ঢাকাবাসীর। জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণের ব্যবস্থা শুরু হয়েছিল ১৯৩০ সালে, ডেভকো নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনায়। ব্রিটিশ শাসনামল পর্যন্ত ঢাকার বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা বেসরকারি উদ্যোগেই পরিচালিত হতো। ১৯৫৭ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার ঢাকার বেসরকারি বিদ্যুৎ সংস্থাগুলি অধিগ্রহণ করে এবং ১৯৫৯ সালে তা নবগঠিত ইস্ট পাকিস্তান ওয়াটার অ্যান্ড পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (EPWAPDA/ওয়াপদা) অধীনে ন্যস্ত করা হয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে ওয়াপদা পুনর্গঠন করে গঠিত হয় বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। ১৯৯১ সাল পর্যন্ত বিপিডিবিরই অধীনে পরিচালিত হতো ঢাকার বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণ ব্যবস্থা। তবে এ খাতের নানা অব্যবস্থাপনা দূর করা, গ্রাহক সেবার মান বাড়ানো আর সিস্টেম লস কমানোর উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপতির এক অধ্যাদেশ-বলে ১৯৯০ সালের মার্চ মাসে ঢাকা ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই অথরিটি বা ডেসা নামের একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান গঠিত হয়। বিদ্যুৎ উৎপাদনের দায়িত্ব বিপিডিবির হাতে রেখে ১৯৯১ সালের ১ অক্টোবর থেকে ডেসার হাতে ছেড়ে দেওয়া হয় ঢাকা মহানগরী ও এর আশপাশের এলাকায় বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্ব। ১৯৯৮ সালে ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি বা ডেসকো নামের আরেকটি সহযোগী সংস্থা গঠন করে ডেসার আওতাধীন কিছু এলাকার দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া হয় তাদের হাতে। আর ২০০৮ সালে ডেসাকে বিলুপ্ত করে গঠন করা হয় ডিপিডিসি।
প্রতিষ্ঠার সময় ঢাকা মহানগরী ও এর আশে-পাশের ৭,৪৭৩ বর্গকিলোমিটার এলাকা ডিপিডিসির আওতাভুক্ত করার পরিকল্পনা ছিল। তবে পরবর্তীকালে সরকারি সিদ্ধান্ত অনুসারে মহানগরীসংলগ্ন এলাকাগুলির দায়িত্ব পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) এবং ঢাকা মহানগরীর কিছু এলাকার দায়িত্ব ডেসকোকে ছেড়ে দেওয়ায় বর্তমানে ডিপিডিসির আওতাভুক্ত এলাকা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩৫০ বর্গ কিলোমিটার।
গ্রাহক সেবার মান বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার উন্নতি এবং সিস্টেম লস কমানোর উদ্দেশ্য নিয়েই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ডিপিডিসির পূর্বসূরী ডেসা। সংস্থাটি গড়ে ওঠার আগে পিডিবি বা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সিস্টেম লস ছিল ৪৫%। ডেসা বিদ্যুৎ বিতরণে সিস্টেম লস কমিয়ে ২৬ শতাংশে নামাতে সক্ষম হয়েছিল। তবে নানা কারণে সংস্থাটি লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হওয়ায় সংস্কার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ডিপিডিসি গঠন করা হয়। ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাস নাগাদ ডিপিডিসির সিস্টেম লস কমে দাঁড়িয়েছে ৯.১০ থেকে ৯.৫৬ শতাংশের মধ্যে। ডিপিডিসির কার্যক্রম পরিচালিত হয় একজন চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের বোর্ড অফ ডিরেক্টরস-এর তত্ত্বাবধানে। সংস্থাটির নির্বাহী প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক, তাঁর অধীনে চারজন নির্বাহী পরিচালক, ছয়জন মহাব্যবস্থাপক এবং ২৩ জন উপ-মহাব্যবস্থাপক বিভিন্ন বিভাগের নির্বাহী দায়িত্ব পালন করেন।  

 
                    
                   
                    
                   
                    
                   
                    
                   
                    
                   
                    
                   
                    
                   
                    
                   
                    
                   
                    
                   
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                            