ময়মনসিংহে লকডাউন মানাতে জিরোটলারেন্স প্রশাসনের
 
                                                                                                এইচ. এম জোবায়ের হোসাইন ( ময়মনসিংহ) : 
ময়মনসিংহে ‘লকডাউনের’ ষষ্ঠ দিনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা অব্যাহত রয়েছে। বিধিনিষেধ অমান্য করায় এই জরিমানা করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
কঠোর বিধিনিষেধের ষষ্ঠ দিনেও ময়মনসিংহের রাস্তাঘাট ছিলো অনেকটাই ফাঁকা। তবে গত ৫ দিনের তুলনায় রাস্তায় ব্যক্তিগত গাড়ি, রিকশা এবং মোটরসাইকেলের মত যানবাহনের সংখ্যা অনেকটাই কম ছিলো, মানুষের চলাচলও তেমন ছিলো না। যারা রাস্তায় বের হয়েছেন তাদেরকে পুলিশ, সেনাবাহিনীরসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জেরার মুখে পড়তে হয়েছে। সরকারি, বেসরকারি ও শ্বায়ত্বশাসিত সব প্রতিষ্ঠান, সব ধরনের সাধারণ নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে। প্রয়োজনের তাগিদে মানুষ ঘর থেকে বের হলেও অনেকটাই আতঙ্কে ছিলো কখন ধরে বসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
মঙ্গলবার ৬ জুলাই সকালে ময়মনসিংহে পাটগুদাম, ব্রীজ মোড়, চড়পাড়া মোড়, টাউন হল মোড়, আকুয়া বাইপাস মোড়, ঢাকা-ময়মনসিংহ রোডের দিগারকান্দা বাইপাসের মোড়সহ বিভিন্ন এলাকা ছিলো জনশুন্য। ঘরে পরিবারের মুখে খাবার তুলে দেবার মতো কেউ নেই, এমন অনেকেই ভয় কে জয় করেই কাজের সন্ধানে রাস্তায় নেমেছেন।
ময়ময়মনসিংহ নগরীসহ জেলার ১৩টি উপজেলার বেশিরভাগ রাস্তাই বিধি-নিষেধের ৩য় দিনেও ফাঁকা ছিলো। মানুষ, রিক্সা ও মোটরসাইকেল চলাচল খুবই কম। নগরীর প্রতিটি সড়কে পুলিশ র্যাব ও সেনাবাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য চেকপোস্ট বসিয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। বিভিন্ন স্থানে পুলিশ, র্যাব ও সেনাবাহিনী চেকপোষ্টে লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। এছাড়া বিভিন্ন গুরুগুরুত্বপূর্ণ মোড়ে পুলিশ সদস্যদের কঠোরভাবে অবস্থান নিতে দেখা গেছে। প্রতিটি চেকপোষ্টে তারা রাস্তায় বের হওয়া সব যানবাহন থামিয়ে লোকজনকে বাইরে বের হওয়ার কারণ জানতে চাচ্ছে। যারা সদুত্তর দিতে পারছেন তাদেরকে যেতে দেওয়া হচ্ছে। আর যারা সব উত্তর দিতে পেরেছেন না তাদেরকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আবার অনেককে জরিমানাও গুনতে হয়েছে মোবাইল কোর্টের সামনে। ষষ্ঠ দিনেও ময়মনসিংহ জেলায় স্বাস্থ্য বিধি নিশ্চিত করণে বিভিন্ন আইনে জরিমানা আদায় করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এর আগে ৪ঠা জুলাই রবিবার জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব প্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেটগণ অভিযান চালিয়ে ৩৭৬ মামলায় ৩,৩৮,১০০ তিন লক্ষ আটত্রিশ হাজার একশত টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসন- ১৭৬ মামলায় ১,৫৪,৮০০ টাকা, উপজেলা প্রশাসন-১৮৫ মামলায়- ১,৫৩,২০০ টাকা, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন- ১৫ মামলায় ৫,১০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
অভিযানের ৫ম দিন সোমবার দিনভর স্বাস্থ্য বিধি মানাতে ম্যাজিস্ট্রেট গণের নেতৃত্বে অভিযানে ৩৪৯ মামলায় ২,০৯,৯৬০ (দুই লক্ষ ৯হাজার ৯শত ষাট) টাকা জরিমানা আদায় করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এর মাঝে জেলা প্রশাসন-মামলাঃ ১৭৭ মামলায়-১,০৭,৭৫০ টাকা, উপজেলা প্রশাসন-১৪৭ মামলায় ৯৪,৩১০ টাকা, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনঃ ২৫ মামলায় ৭,৯০০ টাকা, সর্বমোট ২,০৯,৯৬০( দুই লক্ষ ৯ হাজার ৯শত ষাট) টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, জেলার ১৩টি উপজেলায় ১৩ জন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট, ১৩ জন সহকারী কমিশার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট এবং জেলা প্রশাসন কর্তৃক নিয়োজিত ২৬ জন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটসহ মোট ৫২ জন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ভোর ৬.০০ টা হতে রাত ১০.০০ পর্যন্ত পুরো ময়মনসিংহ জেলায় শহরে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতকরণে নগরীসহ ১৩ টি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হচ্ছে। অভিযান পরিচালনাকালে অভিযান স্থলে গিয়ে অভিযান কার্যক্রম তদারকি করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক একেএম গালিভ খান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) নাসরিন সুলতানা, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আয়েশা হক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সমর কান্তি বসাক।
সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক লকডাউন বাস্তবায়ন ও স্বাস্থ্য বিধি মানাতে জনস্বার্থে অভিযান সফল করতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আরো কঠোর অবস্থান নেওয়া হবে জানিয়েছেন ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আয়েশা হক।
তিনি বলেন- করোনায় মানুষকে সচেতন করতে সকাল থেকে জেলা প্রশাসনের ৫২টি টিম মাঠে নিয়মিত কাজ করছে। তারা কঠোর লকডাউন বাস্তবতায়নে তৎপর রয়েছে। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি এদিক-ওদিক চলাফেরার কোনো সুযোগ নেই। পরবর্তী নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত কঠোর লকডাউন বাস্তবায়ন চলমান থাকবে।

 
                    
                   
                    
                   
                    
                   
                    
                   
                    
                   
                    
                   
                    
                   
                    
                   
                    
                   
                    
                   
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                            