এনআইডি সেবা ইসিতে রাখার পক্ষে বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরলেন সিইসি
নির্বাচন কমিশন (অন্য মন্ত্রণালয় থেকে) আলাদা থাকবে। অন্য কোনো মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এ রকম দাপ্তরিক যোগাযোগ থাকবে না। রবিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সিইসি এসব কথা বলেন। এর আগে ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তা কর্মচারীরা সিইসির সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে সাক্ষাত করেন। তারা এনআইডি সেবা ইসিতে রাখার পক্ষে বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরেন। এনআইডি সেবা ইসির কাছ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীনে নেয়ার বিষয়ে ইসির সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি। সম্প্রতি এ সংক্রান্ত চিঠি পেয়েছি। সরকারের এই বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। বিষয়টি নিয়ে কমিশন বা কমিশন সচিবালয়ের সচিবের সঙ্গে আগে কখনো আলোচনা করা হয়নি। এ বিষয়ে আমাদের থেকে কোন পরামর্শ নেয়া হয়নি। তিনি বলেন, চিঠি দিলেই এটি হয়ে যাবে তা সম্ভব নয়। এর সাথে অবকাঠামো, জনবলসহ অনেক কিছুই জড়িত রয়েছে।
ইসি ভোটার তালিকা তৈরি করে। ভোটারের বয়সটা নির্ধারণ করে। বহুদিন থেকেই এটি ইসি করে আসছে। এখন ইসি ভোটার তালিকা করবে আর এনআইডি থাকবে অন্যদের (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগ) হাতে। এতে ওই মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ‘সাবঅর্ডিনেশন’ বা ‘সুপারিয়রিটি’ এসে যায়। যেটা সংবিধান গ্রহণ করে না। নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সরালে কাজে অসুবিধা হবে বলে মনে করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা।ৎ
এর আগে সিইসির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে বাংলাদেশ ইলেকশন কমিশন অফিসার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি নুরুজ্জামান তালুকদার সাংবাদিকদের বলেন, এনআইডি ভোটার তালিকার একটি বাই প্রোডাক্ট। এই কার্যক্রম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিলে জাতীয় পরিচয়পত্র ও ভোটার তালিকার মধ্যে জটিলতা তৈরি হবে। যুক্তিগুলো সরকারের কাছে পৌঁছালে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা হতে পারে। উল্লেখ্য, গত ১৭ মে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে দেয়া চিঠিতে প্রয়োজনীয় আইন সংশোধন করে এনআইডি সেবা সুরক্ষা সেবা বিভাগে স্থানান্তরের বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়।
সিইসি বলেন, চিঠি পাওয়ার পর কমিশন বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছে। এনআইডি অনুবিভাগের মহাপরিচালককে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, একটি প্রতিবেদন তৈরি করার জন্য। ইসির কী কী যুক্তি আছে সেগুলো তাতে তুলে ধরা হবে। প্রতিবেদনটি ইসি সচিব মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে দেবেন। সিইসি বলেন, স্থানান্তরের বিষয়টি এখন পর্যন্ত একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে, আলোচনার পর্যায়ে আছে। চিঠি দিলেই সাথে সাথে স্থানান্তর করা যায় না। এটি জটিল কাজ।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন,
ভোটার তালিকা এবং জাতীয় পরিচয়পত্র আলাদা হলে তা সাংঘর্ষিক হবে কী না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ভোটার তালিকা তৈরি করি আমরা। আর এনআইডি থাকবে অন্য বিভাগ বা মন্ত্রণালয়ের হাতে। এতে নির্বাচন কমিশন সরকারের অন্য কোন দপ্তরের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে চলে যায়। এটা সংবিধান গ্রহণ করেনা। কারণ সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন আলাদা থাকবে অন্য কোন দপ্তরের অধীনে তারা থাকবে না।
এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, আমরা মনে করি এনআইডি কার্যক্রম ইসির কাছেই থাকা উচিত। কারণ ইসি এটি তৈরি করেছে, ভোটার তালিকা তৈরির ভিত্তিতে। সরকারের যে উৎকণ্ঠা বা পরামর্শ সেটা হলো কোনো দেশে নির্বাচন কমিশন এনআইডি কার্ড করে না। এটা ঠিকই কোনো দেশে এটা নির্বাচন কমিশন করে না। সিইসি আরও বলেন, তবে অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের পরিস্থিতি তুলনা করলে হবে না। ইসির কাছে এটি থাকলে কোনো অসুবিধা নেই। ইসি সেবা দিতে পারছে। তারপরও সরকারের কী চিন্তা ভাবনা আছে তা ইসি সচিব মন্ত্রিপরিষদ পর্যায়ে বা অন্যান্য পর্যায়ে আলোচনা করে বোঝানোর চেষ্টা করবেন। এনআইডি এক দপ্তরে থাকলে আর ভোটার তালিকা ইসির হাতে থাকলে কোনো জটিলতা হবে কি না এমন এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি নূরুল হুদা বলেন, অসুবিধা হবে।