এমডি নিজেই স্বীকার করেছেন : খুলনা ওয়াসার পানি ফুটিয়ে ব্যবহার করেন
 
                                                                                                ওয়াসার পানি ব্যবহার করেন কিনা এমন এক প্রশ্নের জবাবে মঙ্গলবার (১ জুন) দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে পানি ফুটিয়ে ব্যবহার করার কথা জানান
 খুলনা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী মো. আব্দুল্লাহ। তিনি  নিজেই স্বীকার করেছেন ওয়াসার পানি পানের অযোগ্য। ওয়াসার পানি পানযোগ্য করতে তিনি ফুটিয়ে নেন। সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নবানে জর্জরিত হন ওয়াসার এমডি মো. আব্দুল্লাহ। কোনো প্রশ্নেরই সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি। এমডি বলেন, চলতি বছরে শুষ্ক মৌসুম শুরু হওয়ার আগ থেকেই অনাবৃষ্টি অস্বাভাবিক দীর্ঘ হওয়ার কারণে মধুমতি নদীর পানিতে লবণের মাত্রা অনেক বাড়ায় নিরাপদ পানি সরবরাহে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়েছে। এ সমস্যা মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনী ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন খুলনা ওয়াসার উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) প্রকৌশলী কামাল উদ্দিন আহমেদ।
তবে লিখিত বক্তেব্যে ওয়াসার এমডি বলেন, ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহারের উদ্দেশে জাইকা ও এডিবির আর্থিক সহযোগিতায় একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। যা ২০১১ সালে একনেকে অনুমোদিত হয়। এ প্রকল্পটি গ্রহণের আগে জাইকা নিয়োজিত জাপানি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এন জে এস কনসালট্যান্ট-এর মাধ্যমে ২০০৯-২০১০ সালে প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়। এ সমীক্ষায় রূপসা, ভৈরব ও মধুমতি নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে পানি প্রাপ্তির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে প্রয়োজনীয় তথ্যাদির মাধ্যমে নিবিড়ভাবে বিশ্লেষণ করা হয়। পরিবেশ অধিদপ্তর ও অন্যান্য উৎস থেকে সংগৃহীত আগের কয়েক বছরের উপাত্ত বিশ্লেষণ করা হয়। সামগ্রিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে মধুমতি নদীর মোল্লাহাট পয়েন্টে ইনটেক নির্মাণের সুপারিশসহ শুষ্ক মৌসুমের ১৫ দিন উচ্চ মাত্রার লবণাক্ততা মোকাবিলার জন্য মিঠা পানি সংরক্ষণের নিমিত্ত ইস্পাউন্ডিং রিজার্ভারের সুপারিশ করা হয়।
খুলনা পানি সরবরাহ প্রকল্প বাস্তবায়নের পরও সেই পানি লবণাক্ত ও দুর্গন্ধযুক্ত কেন এবং কাঙ্ক্ষিত সুফল খুলনাবাসী কবে পাবে এমন প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারেননি ওয়াসার এমডি।
 প্রকল্পের সমীক্ষা করা হয়েছে প্রকৃতপক্ষে লবণাক্ততার বিষয়টি অগ্রাধিকার দিয়ে। সেখানে লবণাক্ততাকে মূল অনুষঙ্গ হিসেবে ধরে নিয়ে পার্শ্ববর্তী নদীসমূহের বিভিন্ন পয়েন্টের পানির গুণাবলীর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। উক্ত স্টাডিতে লবণাক্ততা পরিশোধন প্রযুক্তি নির্মাণ এবং এর পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ অত্যন্ত ব্যয়বহুল হওয়ায় বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করে তা সুপারিশ হয়নি। রিজার্ভার সংরক্ষিত মিঠাপানির সঙ্গে লবণাক্ত পানির সংমিশ্রণ করে সরবরাহকৃত পানিতে লবণাক্ততা কমিয়ে বিষয়টি একটি যৌক্তিক পদ্ধতি আর এটা করা হচ্ছে জরুরি অবস্থা মোকাবিলার জন্য, অন্য কোনো উদ্দেশে নয়। শুষ্ক মৌসুমে পানির লবণ বৃদ্ধিকালীন উৎপাদক নলকূপের সংখ্যা বাড়িয়ে ভূগর্ভস্থ পানির পরিমাণ বেশি সরবরাহ করা হয় ভূ-উপরিস্থ পানির লবণ কমানো জন্য। যেহেতু এ সময়ে ভূগর্ভস্থ পানি সরবরাহের পরিমাণ বাড়ানো হয়। অন্যদিকে ভূ-উপরিস্থ পানি পরিশোধনের মাধ্যমে সরবরাহের পরিমাণ ঠিক রাখা হয়। শুষ্ক মৌসুম ব্যতীত অন্য সময়ে অধিকাংশ ভূ-উপরিস্থ পানি সরবরাহ করা হলে বিদ্যুৎ ও কেমিক্যাল খরচ যে পরিমাণ বাড়বে তা বহন করার মতো আর্থিক সক্ষমতা ওয়াসার নেই। ভূ-উপরিস্থ পানি  পরিশোধনের মাধ্যমে সরবরাহ ব্যয় বেশি হওয়া সত্ত্বেও পানির বিলের রেট অনেক কম। প্রকল্পটি নিয়মতান্ত্রিকভাবে স্বচ্ছতার সঙ্গে ২ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে রূপসা নদীর তলদেশ দিয়ে পানির সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, জাইকা, খুলনা সিটি করপোরেশন, পরিবেশ অধিদপ্তর, কে ডি এ, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা কমিশনে সমন্বয় করে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, প্রকল্পের আওতায় রূপসা উপজেলার সামন্তসেনায় দৈনিক ১১ কোটি লিটার ক্ষমতাবিশিষ্ট ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়েছে। ওই ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট থেকে প্রায় ৩৩ কিলোমিটার দূরে মোল্লাহাট ব্রিজের পাশে মধুমতি নদী থেকে পানি সংগ্রহ করে পাইপের মাধ্যমে পানি পরিবহন করে ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট-এ পানি পরিশোধন করে রূপসা নদীর তলদেশ থেকে প্রায় ৪০ ফুট নিচে স্থাপিত সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে খুলনা শহরে নির্মিত সাতটি ডিস্ট্রিবিউশন রিজার্ভার ও ১০টি ওভারহেড ট্যাংকের সাহায্যে সিটি করপোরেশনের ৩১টি ওয়ার্ড এলাকায় ১০টি জোনে বিভক্ত করে ৬৫০ কিলোমিটার পাইপের মাধ্যমে প্রায় ৩৭ হাজার ৩০০ বাসগৃহে পানি করা হচ্ছে। বর্তমানে খুলনা ওয়াসার ৩৭ হাজার ৩০০ বাসগৃহের জন্য মাসিক মিটার রিডিং অনুযায়ী পানি ব্যবহারের পরিমাণ প্রায় ২৭ হাজার ঘনমিটার অর্থাৎ ১ কোটি ৭০ লগ লিটার। আগামীতে প্রত্যেক গ্রাহক যদি দৈনিক গড়ে ১ হাজার ২০০ লিটার পানি ব্যবহার করেন তবে পানির প্রয়োজন হতে পারে ৪৪ হাজার ৭৬০ ঘনমিটার বা ৪ কোটি ৪৭ লাখ লিটার। খুলনা সিটি করপোরেশনের তথ্য অনুযায়ী (জুন ২০২০ পর্যন্ত) মোট হোল্ডিংয়ের সংখ্যা ৭ হাজার ১০৩, যার মধ্যে রেসিডেন্সিয়াল হোল্ডিং সংখ্যা ৬২ হাজার ২৫২।  

 
                    
                   
                    
                   
                    
                   
                    
                   
                    
                   
                    
                   
                    
                   
                    
                   
                    
                   
                    
                   
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                            