শিরোনাম

প্রণোদনা প্যাকেজ : এক বছরে ১৬৮২ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের

 প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২১, ০৩:২৬ অপরাহ্ন   |   ব্যাংক


মহামারি করোনাভাইরাসের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের প্রায় শতভাগ ঋণ বিতরণ করতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (বিকেবি)। 
তথ্য বলছে, গত বছরের এপ্রিল থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত এ প্যাকেজের আওতায় ১ হাজার ৬৮২ কোটি টাকা কৃষিঋণ দিয়েছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিশেষায়িত ব্যাংকটি।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক তথ্য অনুযায়ী, প্রথম পর্যায়ের নির্ধারিত ঋণ বিতরণ শেষে নতুন করে লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেয়া হয়, যার প্রায় শতভাগ ঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকটি। প্রথম দফায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মধ্যে ঋণ বিতরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংককে ১ হাজার ১৯৯ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা দেয়। ঋণ বিতরণের সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করার পর নতুনভাবে আরও ৫০০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়। দ্বিতীয় দফায় নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ঋণ বিতরণ চলতি বছরের এপ্রিলেই শেষ হয়েছে। সেইসঙ্গে সিএমএসএমই খাতে ব্যাংকটি ৩৪২ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৩২৩ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করতে সক্ষম হয়েছে।
শিল্প ও সেবা খাতে চলতি মূলধন পুনঃঅর্থায়ন স্কিম ও চা শিল্পের জন্য বেঁধে দেওয়া লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৪৫ কোটি টাকা। এর বিপরীতে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ১৩৫ কোটি টাকা। সচল রফতানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য আর্থিক প্রণোদনা হিসেবে সহজ শর্তে ঋণ প্রদানসংক্রান্ত পুনঃঅর্থায়ন খাতে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ কোটি ৬ লাখ টাকা, যার বিপরীতে শতভাগ ঋণ বিতরণ সম্ভব হয়েছে।
মহামারি কভিড-১৯-এর ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে প্রণোদনার আওতায় কুটির, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (সিএমএসএমই) খাতে সরকার গত বছরের এপ্রিলে ২০ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করে। 
এছাড়া শস্য ও ফসলবহির্ভূত কৃষির জন্য ৫ হাজার কোটি টাকা এবং প্রান্তিক কৃষক ও নিম্ন আয়ের পেশাজীবীদের জন্য আরও ৩ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। সব মিলিয়ে কৃষি খাতের জন্য মোট ৮ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করা হয়।
গত তিন বছরে বেশকিছু উল্লেখযোগ্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। এরমধ্যে রয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ব্যাংকের নিজস্ব অর্থায়নে ঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকটি। অসহায় ভূমিহীন কৃষক, যারা কখনো ঋণ সুবিধার আওতায় আসেননি তাদের মধ্যে এ ঋণ বিতরণ করা হয়। এর আওতায় কৃষকদের মধ্যে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক।
ঋণ বিতরণের পাশাপাশি ব্যাংক ব্যবস্থাপনার সুদক্ষ নেতৃত্ব, সুষ্ঠু তদারকি ও আন্তরিকতার সঙ্গে ব্যাংকের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। এর ফলে ২০১৯-২০ অর্থবছরে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে (এপিএ) বিশেষায়িত ব্যাংকের মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক প্রথম স্থান অর্জন করে। সর্বোচ্চ ৭৯ দশমিক ৯৫ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছে ব্যাংকটি। 

ঋণ বিতরণের পাশাপাশি রেমিট্যান্স সংগ্রহেও ঈর্ষণীয় সাফল্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত ব্যাংকের রেমিট্যান্স সংগ্রহের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৩৩০ কোটি টাকা, যেখানে চলতি অর্থবছরের ২০ জুন পর্যন্ত রেমিট্যান্স এসেছে ৩ হাজার ৩০৯ কোটি টাকা। সেই হিসাবে রেমিট্যান্স সংগ্রহে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৪৯ শতাংশ।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক গত কয়েক বছরে অনেকগুলো ক্ষেত্রে অগ্রগতি অর্জন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে, গত সাড়ে তিন বছরে ব্যাংকের আমানত স্থিতি ২২ হাজার ৫৬০ কোটি থেকে ৩২ হাজার ২১৫ কোটি টাকা হয়েছে। 
ঋণ স্থিতি ১৮ হাজার ৩১২ কোটি থেকে ২৪ হাজার ৫১৫ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে যথাক্রমে ৪৩ শতাংশ ও ৩৪ শতাংশ। ব্যাংকের ঋণ বিতরণের পরিমাণ এ সময়ে ৬ হাজার ২৮৯ কোটি থেকে ১১ হাজার ১৮২ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। 
এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭৮ শতাংশ। শ্রেণীকৃত ঋণের হার ২০১৭ সালে ছিল ২৪ শতাংশ, যা ২০ জুনে প্রায় ৯ শতাংশে নেমে এসেছে। 
এছাড়া ১০ টাকার আমানত হিসাব সংখ্যার ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২১ শতাংশ।

ব্যাংক এর আরও খবর: