জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায় : ১৬৩৭ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে এননটেক্স
 
                                                                                                রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের সবচেয়ে বড় গ্রাহক এননটেক্স গ্রুপ। ব্যাংকটিতে এ গ্রুপের ঋণের পরিমাণ প্রায় ৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ। জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ নিয়মিত করার উদ্যোগ নিয়েছে এননটেক্স।  গত সাত বছরে জনতা ব্যাংকের ঋণের বিপরীতে ১ হাজার ৬৩৭ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে এননটেক্স। মহামারী সত্ত্বেও আগামী আগস্টের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটিকে মোট ৮৭ কোটি টাকা পরিশোধ করার উদ্যোগ নিয়েছে শিল্প গ্রুপটি। ঋণের কিস্তি ও ডাউন পেমেন্ট হিসেবে এ পরিমাণ অর্থ এননটেক্স পরিশোধ করলে খেলাপি হওয়া ঋণটি নিয়মিত করতে পারবে জনতা ব্যাংক। ফলে জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমার পাশাপাশি এননটেক্স গ্রুপের বৈদেশিক বাণিজ্যের পথ সহজ হবে।
বর্তমানে জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এননটেক্সের সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার ঋণ নিয়মিত হলে জনতা ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১০ হাজার কোটি টাকার নিচে নেমে আসবে বলে জানান রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুছ ছালাম আজাদ।
প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ২০১৪ সালে এননটেক্স গ্রুপ জনতা ব্যাংককে ১৯২ কোটি টাকা পরিশোধ করে। এরপর ২০১৫ সালে ২৩৬ কোটি, ২০১৬ সালে ২৯৬ কোটি, ২০১৭ সালে ৩৪২ কোটি ও ২০১৮ সালে ২৮৬ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে গ্রুপটি। ২০১৯ সালে নানা বিতর্ক সত্ত্বেও ৮৬ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে এননটেক্স।
চলমান মহামারী সৃষ্ট অর্থনৈতিক দুর্যোগ সত্ত্বেও গ্রুপটির প্রতিটি প্রতিষ্ঠান উৎপাদনে আছে বলে জানান এননটেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ইউনুস। তিনি বলেন, এ গ্রুপ বর্তমান সরকারের কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও রফতানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। চলমান মহামারীতে যেখানে দেশের অনেক শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে, তখনো এননটেক্সের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান সচল আছে। আমাদের শিল্প গ্রুপে কর্মসংস্থান হয়েছে ২৬ হাজার মানুষের। করোনায় দেশের অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠানই তাদের শ্রমিকদের বেতন-ভাতা কমিয়েছে। কিন্তু আমরা বেতন-ভাতা না কমিয়ে উল্টো কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়েছি। কিস্তি পরিশোধ ও পুনঃতফসিলের মাধ্যমে ব্যাংকের সব ঋণ নিয়মিত করার উদ্যোগও চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে।
করোনার মধ্যেও এননটেক্স গ্রুপের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পেয়েছেন বলে জানান জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুছ ছালাম আজাদ। তিনি বলেন, এননটেক্স গ্রুপ এখন পর্যন্ত জনতা ব্যাংককে দেড় হাজার কোটি টাকারও বেশি পরিশোধ করেছে। নানা কারণে গ্রুপটির ঋণের কিছু অংশ খেলাপি হয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণ পুনঃতফসিলের বিশেষ নীতিমালা অনুযায়ী এননটেক্সের ঋণ নিয়মিত করার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। গ্রুপটি আগস্ট মাসের মধ্যে কিস্তি হিসেবে ৪০ কোটি টাকা এবং ডাউন পেমেন্ট হিসেবে ৪৭ কোটি টাকা পরিশোধের কথা রয়েছে। এ টাকাগুলো পরিশোধ হলে জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণও কমে আসবে। এননটেক্সের সব ঋণ নিয়মিত হয়ে গেলে জনতা ব্যাংকও উপকৃত হবে। ঋণটি নিয়মিত হলে জনতা ব্যাংকের মুনাফা, মূলধন, সঞ্চিতিসহ ব্যাংকের সবক’টি সূচকে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে।
এননটেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ইউনুস জানান, গত তিন বছরে এননটেক্স নিয়ে নানা নেতিবাচক কথা হয়েছে। তার পরও আমাদের প্রতিষ্ঠানের কোনো কর্মী মনোবল হারায়নি। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাশে থেকে আমি প্রতিটি কর্মীকে উজ্জীবিত রাখার চেষ্টা করেছি। এননটেক্সের কারখানায় যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও সুইজারল্যান্ডের সর্বাধুনিক প্রযুক্তির মেশিনারিজ ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানগুলো আগামী পাঁচ বছর উৎপাদনে থাকলে ব্যাংকের সব ঋণই পরিশোধ হয়ে যাবে। ঋণের কিস্তি ও ডাউন পেমেন্ট হিসেবে জনতা ব্যাংকের পাওনা অর্থ শিগগিরই পরিশোধে প্রস্তুতি নিচ্ছি আমরা।

 
                    
                   
                    
                   
                    
                   
                    
                   
                    
                   
                    
                   
                    
                   
                    
                   
                    
                   
                    
                   
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                            